শনিবার সকাল থেকেই জার্মান জুড়ে ছিল অন্য রকম পরিবেশ। একটা উত্তেজনা—কী ঘটতে যাচ্ছে সন্ধ্যায়। বিশ্ব ফুটবল চ্যাম্পিয়নরা কি প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়ে যাবে! প্রকৃতিও যেন সেই কথাই বলছিল। আকাশটা ছিল কালো মেঘে ঢাকা।
খেলাটা ছিল জার্মান ফুটবল দলের খাদের কিনার থেকে উঠে আসা। নব্বই মিনিট পর্যন্ত অমিমাংসিত ম্যাচ, বাড়তি সময়ে টনি ক্রুসের চোখ ধাঁধানো গোল। এ যেন ৩৬ বছর আগের পুনরাবৃত্তি। ১৯৮২ সালে স্পেনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে জার্মান ফুটবল দল আলজেরিয়ার কাছে প্রথম খেলাতে হেরে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ফাইনাল অবধি পৌঁছে। সেবার তারা ইতালির কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েছিল।
জার্মানিতে ঋতুর খাতায় গ্রীষ্মকাল। তবু মেঘ বৃষ্টি আর একটু ঠান্ডার মাঝেই হ্যানোভারের ফাউস্ট সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের খোলা পাবলিক ভিউ চত্বরে হাজির হয়েছি। খেলা শুরুর এক ঘণ্টা আগেই লোকে লোকারণ্য, তিল ধারণের ঠাঁই নেই। নব্বই মিনিট পর্যন্ত হাজার খানেক মানুষ সবাই নিশ্চুপ-বিমর্ষ। কিন্তু পরক্ষণেই পাল্টে গেল দৃশ্যপট। অতিরিক্ত পাঁচ মিনিটের খেলায় টনি ক্রসের অসাধারণ গোল ভেঙে দেয় জার্মান সমর্থকদের নীরবতা। ফাউস্ট সাংস্কৃতিক কেন্দ্রেও ছড়িয়ে পড়ে উচ্ছ্বাস। হাজার খানেক মানুষ সবাই সবাইকে জড়িয়ে ধরে উল্লাস করে। চিৎকার, নাচানাচি আর ভুভুজেলার আওয়াজ—এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য!
গভীর রাত। বড় পর্দায় খেলা দেখে ঘরে ফিরছি। কিন্তু তখনো রাস্তায় হাজারো মানুষের ঢল। দুই পাশ দিয়ে অসংখ্য গাড়ি কালো লাল সোনালি পতাকা দুলিয়ে, ভেঁপু বাজিয়ে ছুটছে। হয়তো জার্মানরা এটাই বলতে চাচ্ছেন—অত সহজে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ার পাত্র তারা নয়।